নিজস্ব প্রতিবেদক।
নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. জসিম উদ্দিনের স্বেচ্ছাচারিতা,অনিয়ম ও অসদ আচরণে গ্রাহক হয়রানী চরম আকার ধারণ করেছেন। ডিজিএম যোগদানের পর গত ছয় মাস ধরে তার স্বেচ্ছাচারিতায় অনিয়ম ও অসদ আচরণে ভোগান্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে গ্রাহকরা। ইতোমধ্যে ডিজিএমকে বদলি জন্য পল্লী বিদ্যুতের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের তদন্ত করেছে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তার বিরুদ্ধে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে বলে পল্লী বিদ্যুতের একটি সূত্রে জানিয়েছেন। গ্রাহকদের ভোগান্তি লাঘবে তাকে দ্রæত অন্যত্র বদলি না করা হলে মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচীর ডাক দিয়েছেন গ্রাহকরা। তার স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের প্রতিবাদ করায় অন্যত্র বদলি হয়েছেন ইন্সপেক্টর নাজমুল আলম।
গ্রাহকদের অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো.জসিম উদ্দিন সোনারগাঁ জোনাল অফিসে যোগদানের পর থেকে তার নতুন নিয়মে মিটারের জন্য আবেদন করতে হয়। পল্লী বিদ্যুৎতের নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করে নিজের মনগড়া মতো নিয়ম তৈরি করে মিটার পেতে আবেদন করতে হয়। তার মন মতো আবেদন না হলেই বিভিন্ন অজুহাতে আবেদন বাতিল করে দেন। নিময় অনুযায়ী বাড়ির পর্চা থাকলেই মিটার আবেদন করা যায়। তিনি বাড়ির পর্চা নিজের নামে ও অনলাইন পর্চা দিয়ে আবেদন করতে নিয়ম করেন। তাছাড়া পরিবারে গ্রাহককে বাবা মা থেকে আলাদা হয়ে সংসার করলেই মিটার দেওয়া হবে। তার মনগড়া নিয়ম পালন না করলে সেই আবেদন বাতিল করে দেন। ডিজিএম পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে কমিশন পাওয়ার জন্য জোরপূর্বক পোষ্টপেইড মিটার বিচ্ছিন্ন করে প্রিপেইড মিটার সংযোগ দিচ্ছেন। এতে প্রিপেইড মিটারে গ্রাহকরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। পল্লী বিদ্যুতের পোষ্টপেইড মিটারে বিদ্যুৎ বিল এক মাসের বকেয়া থাকলে মিটার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মিটার অফিসে নিয়ে যান। সেখানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা বিভিন্ন খাত দেখিয়ে আদায় করে থাকেন। সেই টাকা থেকে ডিজিএম টাকা নিয়ে থাকেন।
গ্রাহকরা আরো জানায়, পল্লী বিদ্যুতের নিয়ম অনুযায়ী তিন মাসের অধিক সময় বিল পরিশোধ না করলে গ্রাহকদের নোটিশ প্রদান করতে হয়। ডিজিএম নোটিশ না করেই গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে থাকেন। সেই মামলা নিষ্পত্তি করতে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন। সিন্ডিকেট করে এসব অপকর্ম করেন বলে জানিয়েছেন ওই অফিসের একাধিক কর্মচারী। এ সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে কাজ করেন হিমেল ও আলমগীর হোসেন। এ সিন্ডেকেটে ডিজিএমসহ আরো ছয়জন রয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছেন।
গ্রাহকদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ ব্যবহারে বিভিন্ন সমস্যা ও ত্রæটি দেখা দিলে অভিযোগ কেন্দ্রে অভিযোগ দেওয়ার পর সমাধানে গিয়ে আলমগীর ও হিমেল গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে সমস্যা বা ত্রæটি সমাধানের গড়িমসি করে থাকে। বিষয়টি ডিজিএমকে ফোনে জানালে উল্টো গ্রাহকদের সঙ্গে অসদ আচরণ করেন ডিজিএম। এ বিষয়ে প্রতিকার চান গ্রাহকরা।
সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে ব্রহ্মণবাড়িয়া অফিসে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার জন্য ডিজিএম জসীমউদ্দিন চাকুরিচুত্য হয়েছেন। সম্প্রতি আদালতের মাধ্যমে চাকুরি ফিরে পেয়ে সোনারগাঁ যোগদান করে আবারো সেই অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় করে আসছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কয়েকজন কর্মচারী জানান, ডিজিএমের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করলেই অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়। তাছাড়া তার ভাই জেলা জজ হিসেবে কর্মরত আছেন। তার অনিয়মের প্রতিবাদ করলে মামলার হুমকি দেওয়া হয়।
কান্দারগাও গ্রামের গ্রাহক ও ইউএনও এর ব্যক্তিগত গাড়ী চালক আবু তাহের বলেন, এনালগ পর্চা দিয়ে তিনি নতুন মিটারের আবেদন করেন। ডিজিটাল পর্চা না দেওয়ার কারনে তার আবেদন বাতিল করে ডিজিএম। বিষয়টি জানতে তার দপ্তরে গেলে দাখিল করা কাগজপত্র ছুড়ে ফেলে তাকে কক্ষ থেকে বের করে দেন।
সাতভাইয়া পাড়া গ্রামের গ্রাহক আমজাদ হোসেন বলেন, এক মাসের বিল বকেয়া থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মিটার অফিসে নিয়ে যায়। অফিসে গেলে তার কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিলসহ অতিরিক্ত আরো তিন হাজার দুই শ টাকা আলমগীরের মাধ্যমে আদায় করেছেন। যার কোন রশিদ দেওয়া হয়নি।
নয়ামাটি গ্রামের গ্রাহক ও ছাত্রলীগ নেতা মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, তার পোষ্টপেইড মিটার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে প্রিপেইড মিটার সংযোগ দিতে যান বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা। সেখানে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হলে ডিজিএম তাকে গালিগালজ করেন।
অভিযুক্ত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, অভিযোগের কোন সত্যতা নেই। কাজ করতে গিয়ে অনেকের সঙ্গে কথা হয়। কে কোন দিন থেকে হয়রানী হচ্ছে আমার জানা নেই। এক পর্যায়ে অফিসে গিয়ে সরাসরি তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (সদর দপ্তর) প্রকৌশলী হরেন্দ্র নাথ বর্মন বলেন, তার বিরুদ্ধে এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।