বিশেষ প্রতিবেদক :
গত ৩ দিনের মতো আজও অস্থির রয়েছে রাজধানীর অন্যতম সেরা বালিকা বিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত সিদ্ধেশ^রী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। ছাত্র জনতার গণঅভ’ত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর পরই আত্ম গোপনে চলে যায় স্কুলের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান রইসুল ইসলাম ময়না। অজ্ঞাত অবস্থানে থেকে তিনি নিজের পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন প্রধান শিক্ষকের কাছে।
ঘটনা প্রচারিত হলে চেয়ারম্যানের দোসর হিসেবে পরিচিত বাংলামাধ্যমের সহকারি শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন ও ইংরেজি ভার্ষনের সহকারি শিক্ষক শ্যামা আক্তারের পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে ছাত্রীরা। ছাত্রীদের প্রথম দিনের আন্দোলনেই স্কুল থেকে পালিয়ে যান দেলোয়ার হোসেন। কিন্তু পদ আঁকড়ে থাকতে মরিয়া হয়ে ওঠেন শ্যামা আক্তার। দীর্ঘ সময় ধরে চেয়ারম্যানের দোসর হিসেবে কাজ করলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে না নিয়ে কিছু ছাত্রী ও কিছু পোষ্য অভিভাবকদের নিয়ে স্কুল দখলে নেয়ার চেষ্টা করে সে। সে ঘটনায় বাধাঁ দিতে গিয়ে ইংরেজি মাধ্যমের কয়েকজন উৎশৃঙ্খল অভিভাবক ও শিক্ষকদের হাতে মারাত্বক জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় স্কুলের ৬ জন বাংলা মিডিয়ামের আন্দোলনকারি ছাত্রী। ছাত্রীদের এ হেন নিগৃহিত হওয়ার ঘটনায় সামনে আসে স্কুলের বাংলা বিভাগের প্রভাতি শাখার কয়েকজন শিক্ষিকা। তারা ছাত্রীদের রক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার কারণে শ্যামা আক্তার ও তার ক্যাডার বাহিনীর চক্ষুশূলে পরিনত হয়।
এ দিকে ঘটনার আকষ্মিকতায় ও চাপ সামলাতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাহাবুদ্দিন মোল্ল্যা। তিনি ভর্তি হন হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে। আজ বিভাগীয় কমিশনারের অফিসে দেখা করার সময় নির্ধারিত থাকার কারণে হাসপাতাল ছেড়ে স্কুলে আসেন প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসছেন এমন সংবাদে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নতুন দুটি তালা মেরে দেয়া হয়।
কেন প্রধান শিক্ষকের অফিসে তালা মারা হলো এমন প্রশ্নে জবাবে আজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাহাবুদ্দিন মোল্ল্যা গণমাধ্যম কর্মিদের সাথে খোলামেলা কথা বলেন। তিনি জানান, আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। আমার হার্টে রিং পরানোর দিন আজ। কিন্তু বিভাগীয় কমিশনার অফিসে যেতে হবে তাই স্কুলে আসছি। এসে জানলাম আমার রুমে তালা দেয়া হয়েছে। কেন দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক জানান, আমার অফিসে অনেক ডকুমেন্টস রয়েছে। সেই সব ডকুমেন্টস যাতে আমি নিতে না পারি সে কারণে এটা করা হয়েছে। কারা করেছে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে অনেকের নিয়োগের বৈধতা নেই। আবার সকল নিয়ম ভেঙ্গে অযাচিত সুবিধা নিয়েছে অনেকে। তারা এখন আমাকে কোন ভাবেই চায় না। তিনি বলেন, গত ১৫ বছর এখানে আমি অনেকটাই গৃহবন্দির মতো ছিলোম। স্কুলের কোথায় কি হয়েছে সব করেছে চেয়ারম্যান আর দুই সহকারি প্রধান শিক্ষক।
ইংরেজি মাধ্যমের সহকারি প্রধান শিক্ষকের নিয়োগের বৈধতা নেই। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ । এখানে অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ম মানা হয়নি। ইচ্ছেমতো যকে ইচ্ছে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সুবিধা দেয়া হয়েছে। আমি কিছুই করতে পারিনি।এখন সে সব তথ্য যাতে সামনে না আসে সে জন্য তারা আমার রুমে তালা দিয়েছে।
এ দিকে আওয়ামীলীগ ক্ষমতা হারানোর পর অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বেশ কয়েকজন আওয়ামী পরিবারের সদস্য পরিচয়ে স্কুলে চাকুরি নেয়া শিক্ষক । এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতা আমির হোসেন আমুর ভাতিজা বউ হিসেবে পরিচিত মির লাইজু। আজ এই লাইজু স্কুলের একজন সাধারণ শিক্ষিকা জান্নাতুল উম্মির উপর চড়াও হন। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে জান্নাতুল উম্মি গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধান শিক্ষক স্কুলে এসেছেন জেনে আমরা সবাই তার সাথে দেখা করতে যায়, সে জায়গায় আমরা দাঁড়িয়েছিলাম। লাইজু এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে তুমি মিটিং কর!আমি বল্লাম নাতো। আমিতো কোন কিছুতে নেই। সে তখন উত্তেজিত হয়ে বলে চোপ! আর সাথে সাথে সে আমাকে চড় থাপড় মারতে শুরু করলো। সেই সাথে সে হুমকী ধামকী দিতে থাকে। ভবিষ্যতে দেখে নেয়ারও হুমকী দেয় সে। সে বলে সব তার জানা আছে। তিনি যোগ করেন স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখলে সব জানতে পারবেন।
সহকারি প্রধান শিক্ষক শ্যামা আক্তারকে তার নিয়োগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব প্রশ্ন কেন আসছে। যা জানার প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে জানেন। এ বিষয়ে আমি কোন কথা বলবো না। এ দিকে মির লাইজুর মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও তার ফোন বন্ধ পাওযা যায়।
এ দিকে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধান শিক্ষক বলেন, আমরা অবশ্যই ঘটনার ন্যায় বিচার করবো। তিনি ছাত্রী শিক্ষক ও অভিভাবকদের শান্ত থাকার অনুরোধ জানান এবং গণমাধ্যম কর্মিদের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, প্রতিটি ঘটনারই ন্যায় বিচার হবে।