চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ
অবশেষে আল্টিমেটাম দেয়ার এক সপ্তাহ পর বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ এনে চার দফা দাবিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শুল্ক স্থল বন্দর উত্তরের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধের এই ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বন্দরটির আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রæপের সভাপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দীন।
তিনি জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মাশুল আদায় করছে। এছাড়া নিয়ম বহির্ভূতভাবে ওয়্যারহাউস ভাড়া, নিরাপত্তার অভাবসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতির কারণে আমরা ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এ ব্যাপারে বারবার বলা সত্তে¡ও পানামা কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তাই বাধ্য হয়েই আজ রবিবার থেকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে সকল প্রকার পণ্য আমদানি-রপ্তানি ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে সোনামসজিদ স্থলবন্দর বাদ দিয়ে দেশের অন্যান্য বন্দর দিয়ে পণ্য আনা-নেয়া করছেন বলে জানান আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রæপের সভাপতি।
আমদানি-রফতানিকারক গ্রæপের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ বলেন, পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড ২০১৯ সাল থেকে হঠাৎ করেই পাথরের ট্রাকে ৭৮৩ টাকার পরিবর্তে ৮ হাজার টাকা মাশুল আদায় শুরু করে দেয়। কিন্তু এসব অর্থ সরকারি নিয়মে চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা না করে পানামা পোর্টের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়ছে বলে জানা গেছে। এছাড়া রাজস্ব আদায়ের দিক থেকে সোনামসজিদ স্থলবন্দরটি দ্বিতীয় হলেও ২০০৬ সালে বন্দরটি উদ্বোধনের পর থেকে এখন পর্যন্ত বিওটির শর্ত মোতাবেক বন্দরের অভ্যন্তরে অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ শেষ করতে পারেনি পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড। এমনকি ফোর্ক লিফট, ক্রেন, রেকার, হেভিওয়েট স্কেলের মতো পূর্ণ সক্ষমতার লজিস্টিক সাপোর্টের ব্যবস্থাও করতে পারেনি পানামা।
এ বিষয়ে সোনামসজিদ স্থলবন্দর পানামা পোর্টলিংক লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা টিপু সুলতান বলেন, সরকার নির্ধারিত পণ্য খালাশের মাশুল দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা। তারা ২০১৯ সালে একটি পাথরের ট্রাকে যে ৭৮৩ টাকা মাশুল দিতেন এখনো সে টাকাই দিতে চান। কিন্তু সরকার মাশুলের পরিমাণ বাড়িয়েছেন যা প্রায় চার হাজার টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত শতাধিক পণ্যবাহি গাড়ি বন্দর দিয়ে প্রবেশ করলেও রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভারতীয় পণ্যবাহি কোনো ট্রাক ভারত থেকে বন্দরে প্রবেশ করেনি।
এদিকে আমদানি-রপ্তানিকারকদের এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মাইনুল ইসলাম বলেন, বন্দরের দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে। আমদানি-রপ্তানি বন্ধ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। দ্রæতই এ বিষয়ে সমাধান হয়ে যাবে।
ব্যবসায়ীদের দাবিগুলো হলো-
সোনমসজিদ স্থল বন্দর নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান পানামা পোট লিংক লিমিটেড কর্তৃক পাথর বোঝাই ট্রাকের পণ্য খালাসে মাশুল আদায় কমানো, পানামার এক নাম্বার গেট দিয়ে ভারতীয় ট্রাক প্রবেশে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেয়া ভারতীয় ১৭০ থেকে ১৮০ রুপি বাংলা টাকায় গ্রহণ, পানামা চত্বরে একটি ট্রাক ২৪ ঘণ্টার বেশি অবস্থানে ২০০ রুপি চার্জ নেয়া বন্ধ করা এবং বিগত দিনে ব্যবসায়ীদের দেয়া ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে কিনা তা তদন্ত করতে হবে।
এর আগে চলতি মাসের আট তারিখ সোনামসজিদ আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন হয়রানীর অভিযোগে ১১ দফা দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন ও সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সে সময় আমদানি-রপ্তানি বন্ধের ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটামের হুশিয়ারিও দেন ব্যবসায়ীরা। এসবে প্রতিকার না পেয়ে রবিবার থেকে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দেন তারা।