সামির সরকার সবুজ সোনারগাঁ নারায়ণগঞ্জ।
মফস্বল সাংবাদিকদের কষ্টমাখা জীবনের গল্প লিখতে বসেছি মাঠের সাংবাদিকতায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে। সংসারের টানাপোড়নের মুখেও প্রতিদিন হাসিমুখে সংবাদ সংগ্রহে বেরিয়ে পড়ি মাঠে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, দুর্যোগের মধ্যেও করি দায়িত্ব পালন। গভীর থেকে সত্য বের করে আনতে কখনো নিজের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কাকে পেছনে ফেলে কাজ করে যাই। ভুলে যাই খাওয়া-দাওয়া। সঠিক তথ্য দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরতে গিয়ে অনেক সময় নিজের পরিবারের কথাও ভাবা হয় না। নিজের আরাম আয়েশ এমনকি বিশ্রামও ঠিকভাবে করতে পারি না। কারণ সাংবাদিকরা জাতির জাগ্রত বিবেক বলে কথা। তাই সব সময় জাগ্রত থাকতে হয়। দেশ ও দশের পাহারাদারের দায়িত্বে।
মানুষের কথা বলি, মানবতার কথা বলি। ক্ষুধার্ত-নিপীড়িত মানুষের কথা বলি। অন্যায়, অবিচার, অপরাধের কথা তুলে ধরি। আবার সরকারের উন্নয়নের কথাও তুলে ধরি। পোশাক শ্রমিক থেকে শুরু করে সমাজের সব স্তরের, সব পেশার মানুষদের প্রতি বৈষম্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন সাংবাদিকেরা৷ কিন্তু সেই সাংবাদিকেরা যখন নানা ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হন, অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তি থেকে শুরু করে আমলা ও প্রশাসন, হাতে গুনা দু,একজনকে প্রাধান্য দিয়ে যত সুযোগ সুবিধা আছে তাদেরকেই দিয়ে থাকেন, মফস্বলে সাংবাদিকতার আরেক টি বিষয়, অনেক সিনিয়র গণমাধ্যমকর্মী আছেন বা একটু বড় হাউজে কাজ করেন তাদের কাছ থেকে সবচেয়ে বড় বৈষম্যের শিকার হন তারা জুনিয়ররা। এ সব কথা শোনারও কেউ নেই,বলারও জায়গা নেই, আর সংবাদ কর্মীতাদের দাবি আদায়ের রাস্তা খুবই সংকীর্ণ৷ প্রতিনিয়ত বৈশম্যের শিকার হচ্ছি তার খবর কাকে বলবো,
মাঠের সাংবাদিকদের দীর্ঘশ্বাস কি কখনও কি জানতে চান কেমন করে চলছে আমাদের সংসার। পরিবারের ভরন মেটাচ্ছি বা কিভাবে। আমার মতো মফস্বলের সাংবাদিকরা মান সম্মানের প্রশ্নে মুখ ফুটে কারও কাছে বলতেও পারছেন না, আবার চলতেও পারছেন না। মফস্বল সাংবাদিকদের সংসার কিভাবে চলছে এ খবর কেউ নিচ্ছে কি? এর উত্তরে কী বলবো? কে খবর নেবে?
গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি আপনার দায়িত্বটুকু নুন্যতম পালন করছেন কি না?
আমি বলবো এই নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই তাদের। তবে বিনা বেতনে শ্রম আদায় করে নিতে চুল পরিমান ছাড় নেই। পান থেকে চুন খসলেই কান ফাটনো গগন কাঁপানো ঝারি।
মাঝে মাঝে তো জীবননাশের হুমকিও আসে। হামলাও হয়, মামলাও হয়। তবুও ভয় না করে কাজ করি। পদে পদে বিপদ তা জেনেও আমরা পিছপা হই না। ঝুঁকি থাকা সত্বেও আমি নির্ভিক, আমি সৈনিক। সংবাদপত্র সমাজের দর্পণ। সে দর্পণ সবার মাঝে বিলিয়ে দিতেই রাষ্ট্রের কাজে নিবেদিত করেছি নিজেকে। নিজের জন্য নয় মানুষের জন্য কাজ করতে পারছি এটাই সার্থকতা।
আমার তোলা একটি ছবি, কিংবা আমার একটি লেখার দ্বারা হয়তো অনেকেরই ভাগ্যের দ্বার খুলে যায়। মানবতার অধিকার খুঁজে পায়। নির্যাতিত, নিপীড়িতরা বিচার পায়। এটাই আমরা সার্থকতা। এটা নিয়েই আমি মনের শান্তি খুঁজে ফিরি। পরিশ্রম আর বিনা বেতনে কি সুন্দর আমাদের জীবন। দিনশেষে হাসিমুখে মেনে নিতে হয় সব কিছু। এভাবেই যাচ্ছে আমাদের দিনকাল। তবুও বলবো ভালো থাকুক সবাই। ভালো থাকুক আমার স্বাধীন বাংলাদেশ।
আমি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যমকর্মী। আমি অতি সামান্য হলেও একজন দায়িত্বশীল সচেতন নাগরিক। আমার উপর রাষ্ট্রের অনেক দায়িত্ব। শুধু কি আমার রাষ্ট্রের প্রতি আমারই দায়িত্ব? রাষ্ট্রের কি আমার প্রতি কোন দায়িত্ব নেই।
কোন নেতা বা ব্যক্তি না ভাবছেন আমাদের কথা। তাই আমাদের টানাপোড়নের জীবনের গল্প শুনার কেউ নেই, বলারও জায়গা নেই।
সামির সরকার সবুজ , সাংবাদিক, সোনারগাঁ,নারায়ণগঞ্জ।