নিজস্ব প্রতিবেদক।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার শম্ভুপুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী সম্মেলনে তৃণমূল কর্মীদের উপর মোল্লাবাহিনীর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হইয়াছে।
২৮ জানুয়ারী রাত্রে মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য যে,গত বুধবার ২৫ (জানুয়ারি) বিকালে উপজেলার শম্ভুপুরা ইউনিয়নের এলাহীনগর ঈদগাহ্ মাঠে শম্ভুপুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী সম্মেলন চলাকালে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
মামলায় এলাহিনগর ঈদগাঁ মাঠের সংঘর্ষের ঘটনায় শম্ভুপুরা ইউনিয়নের নবীনগর এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিক মোল্লাকে ১নং আসামী এবং ২২ জন সহ আরো অজ্ঞাত ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী সম্মেলনে উক্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক মোল্লা ও সাবেক ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অর্ধশত কর্মী সমর্থক আহত হয়। কর্মী সম্মেলন ও শম্ভুপুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তার স্বাগত বক্তব্যে উক্ত ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ায় তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে আবু বক্কর সিদ্দিক মোল্লার সমর্থকেরা নাসির উদ্দিনের সমর্থকদের উপরে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে নাসির উদ্দিনের কর্মী সমর্থকদের ৫০ জনের মতো গুরতর আহত হয়। গুরুতর আহত কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ৫/৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গুরুতর আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হসপিটালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি আছে।
জানা যায়, শম্ভুপুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক মোল্লার একক সিদ্ধান্তে এতদিন পরিচালিত হয়ে আসছিলো উক্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম। একমাত্র সিদ্দিক মোল্লার অনুসারী ছাড়া উক্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচিতে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করতে পারতেন না। কারণ হিসেবে জানা যায়,আবু বক্কর সিদ্দিক মোল্লা তার নিজ অনুসারীদের ছাড়া উক্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচিতে কাউকে আমন্ত্রণ জানাতেন না বরং কোনঠাসা করে রাখতো।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সিদ্দিক মোল্লা শম্ভুপুরা ইউনিয়ন পরিষদের গত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কেন্দ্র থেকে শম্ভুপুরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য নাসির উদ্দিনকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়। ওই নির্বাচনে উক্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তার পরিবারের সদস্যরা নৌকার বিপক্ষের প্রার্থী জাতীয় পার্টির আব্দুর রউফ’র পক্ষে কাজ করে। ওই নির্বাচনে নাসরিন উদ্দিনের নৌকা প্রতীক প্রায় তিনশত ভোটের ব্যবধানে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন, গত নির্বাচনে শম্ভুপুরা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীকে ডুবানোর সূক্ষ্ম কারিগর ছিলেন এই আবু বক্কর সিদ্দিক মোল্লা। তাই এসব সহ বিভিন্ন কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের তৃনমুল নেতাকর্মীরা সিদ্দিক মোল্লার বিরোধীতা করে আসছিলেন। তারা বলেন,শম্ভুপুরা ইউনিয়ন পরিষদের গত নির্বাচনে নৌকা ডুবানোর পর এবার উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে উদ্দেশ্য মূলক ভাবে শম্ভুপুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী সম্মেলন পন্ড করে দিয়েছেন ইউনিয়ন সভাপতি নিজেই। তারা আরো বলেন,স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা চেয়েছিলেন হোসেনপুর স্কুল অথবা কলেজ মাঠে কর্মী সম্মেলন করার। কিন্তু তাদের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে শম্ভুপুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হোসেনপুর এর পরিবর্তে এলাহী নগরে কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করেন। এবং এই কর্মী সম্মেলনে সিদ্দিক মোল্লা তার অনুসারীদের ছাড়া তৃনমুলের কোনো নেতাকর্মীকে আমন্ত্রণ জানায়নি। এমনকি তিনি দলের বিভিন্ন ত্যাগী নেতাদের আমন্ত্রণ না জানিয়েও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে মিথ্যে প্রচার করেছেন বলে জানা যায়।
সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে শম্ভুপুরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য নাসির উদ্দিন জানান, শম্ভুপুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী সম্মেলনে উক্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক মোল্লার উস্কানিমূলক বক্তব্য ও তার নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে আমার ও আমার চরকিশোরগঞ্জ এলাকার আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। সিদ্দিক মোল্লার নির্দেশে তার অনুসারীরা লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমার নেতাকর্মীদের উপর এই হামলা চালায়।
এ ব্যাপারে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, শম্ভুপুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিক মোল্লার উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারনে ঐদিন নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য তখনই আমরা কর্মী সম্মেলন স্থগিত করি এবং কর্মী সম্মেলনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।