নিজস্ব প্রতিবেদক,
সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি বলেছেন, সংগীতের সার্বিক মান উন্নয়ন, সংগীত বান্ধব সামাজিক পরিবেশ তৈরি ও সংগীত সংশ্লিষ্টদের যথাযথ সম্মান ও সম্মানী নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে সংগীতের ৩টি সংগঠন গীতিকবি সংঘ বাংলাদেশ, কম্পোজার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও সিঙ্গারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ নিয়ে গত বছরের ১০ জুলাই ‘সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ’ গঠিত হয়। ‘সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ’ সংগীত সংশ্লিষ্টদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতকল্পে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিকট ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করে। সংশোধিত কপিরাইট আইন পাস হলে সংগীত সংশ্লিষ্টদের প্রস্তাবনা বা দাবি-দাওয়া অনেকটাই পূরণ হবে। জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে আইনটি পাস হতে পারে বলে আশা করছি।
প্রতিমন্ত্রী আজ রাতে রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ’ আয়োজিত সংগীতের মাসব্যাপী প্রথম জাতীয় উৎসব ও সম্মেলন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি।
প্রধান অতিথি বলেন, মানব জীবনের প্রতিটি পর্বের সঙ্গে সংগীত ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জাতীয় জীবনেও এর গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়। তিনি বলেন, সংগীতের সুপ্ত প্রতিভা প্রতিটি বাঙালির মাঝেই বিদ্যমান। কৃষকের ধান কাটা, মায়ের বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানো, বন্ধুদের আড্ডাসহ প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা গুনগুন করে গান গাই।
সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ’র বিভিন্ন প্রস্তাবনাকে যৌক্তিক উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, সংগীতের সাধনা ও গভীর মমত্ববোধ থেকেই স্বাধীনতার ৫০ বছর ধরে এদেশের সংগীত শিল্পীরা গান গেয়ে চলেছেন। তিনি বলেন, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলে প্রস্তাবনাসমূহের বেশিরভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। তিনি বলেন, সময় এসেছে সংগীত শিল্পীদের যথাযথ মূল্যায়নের। ঐক্যের ধারা অটুট রেখে সংগঠনটি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে মর্মে তিনি এসময় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংগীতসহ শিল্পের সকল শাখার শিল্পীদের সার্বিক কল্যাণ ও সুরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। সেজন্য অতি শীঘ্রই আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট’ নামে একটি সংস্থা যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। এটি নিয়ে এ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার সংখ্যা দাঁড়াবে ১৮টিতে। এ ট্রাস্টের মাধ্যমে শিল্পীদের সার্বিক কল্যাণে বিভিন্ন যুগোপযোগী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বিশেষ অতিথি বলেন, সংগীতের কোনো ধর্ম নেই, কোনো জাত নেই, কোনো রং নেই, সংগীতের নেই কোনো দেশ। সংগীত মানুষের মনকে পরিশীলিত করে, উজ্জীবিত করে। সেজন্য সহজেই সংগীতের হাত ধরে মেলবন্ধন ঘটে মানুষের মনের। মহান মুক্তিযুদ্ধে সংগীত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেছে ও সাহস জুগিয়েছে উল্লেখ করে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা সে সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান শুনে অনুপ্রাণিত হতাম। সাংস্কৃতিক মুক্তি না আসলে স্বাধীনতা পরিপূর্ণ হবে না বলে তিনি এসময় উল্লেখ করেন।
‘সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ’ এর মহাসচিব শহীদ মাহমুদ জঙ্গী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন সিংগার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক ও সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ এর মহাসচিব কুমার বিশ্বজিৎ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী এবং মিউজিক কম্পোজার্স সোসাইটি বাংলাদেশ এর সভাপতি ও সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ এর মহাসচিব নকীব খান।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিশুদের পরিবেশনা, উচ্চাঙ্গ কণ্ঠ/যন্ত্রসংগীত, পঞ্চকবির গান: মেডলি, লোকগান: লালন সাঁইজির গান, চলচ্চিত্রের গান: মেডলি, অডিও অ্যালবামের গান: মেডলি ও ব্যান্ড সংগীত পরিবেশিত হয়।