বিশেষ প্রতিনিধি সোনারগাঁ উপজেলা।
গত বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩) একটি দৈনিক আলোকিত সকাল পত্রিকায় ‘সোনারগাঁয়ে ভুল চিকিৎসায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে প্রসূতি’ এই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয় এবং এই পত্রিকাটির স্থানীয় সংবাদকর্মী সরেজমিনে পূণরায় এর সত্যতা যাচাই-বাছাই করে বৃহস্পতিবার ২১ই আগষ্ট একটি প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানায়।
অন্যদিকে একটি ভুয়া ও অনিবন্ধিত অনলাইন ফেইসবুক পেইজ ‘আড়ালের চোখ টিভি’র কর্ণধার ও ভুয়া আইপিটিভি ‘নিউজ টুয়েন্টি ওয়ান বাংলা টিভি’র নিউজ প্রেজেন্টার পরিচয়দানকারী কহিনুর কনা নামের হলুদ সাংবাদিক তথ্য উপাত্ত ছাড়াই ডাঃ শিউলী সরকারকে ভুয়া ডাক্তার বলে আখ্যায়িত করেছেন। এমনকি মেডিকেল রিপোর্ট বা রোগীর কেইস সামারি ছাড়াই ভুয়া চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলেও প্রচার করেন তিনি। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে প্রকাশিত কয়েকটি স্থানীয় পত্রিকা সহ বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সোস্যাল মিডিয়াতেও এই ভুয়া সংবাদ কপি করে প্রচার করা হয়। এতে সোনারগাঁ সেন্ট্রাল হাসপাতাল সহ ডাঃ শিউলী সরকার এর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়।
সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, মোসা: তিন্নি আক্তার (২০)কে তার স্বজনরা গত ৩০ই আগষ্ট সোনারগাঁ সেন্ট্রাল হাসপাতাল নিয়ে ভর্তি করায় এবং ওইদিনই বিকাল আনুমানিক সাড়ে ৩ ঘটিকার সময় সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব করানো হয়। বাচ্চা ও রোগী উভয়ই সুস্থ ছিলেন। রোগীর সুস্থতা দেখে দায়িত্বরত চিকিৎসক ২ সেপ্টেম্বর দুপুরে রোগীকে ড্রেসিং করে ছুটি দেয়। তারপর ৮ সেপ্টেম্বর সেলাই কাটতে আসলে সেলাই কেটে দেওয়া হয় এবং রোগী পুরোপুরি সুস্থতা লাভ করে। ওই সময় রোগীর কোনো অভিযোগ ছিলো না। তারপর স্বজনরা খুশিমনে বাড়ি ফিরে।
বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর ১১ই সেপ্টেম্বর আনুমানিক রাত ১১টার দিকে খিচুনি হয় (যাকে মেডিকেল ভাষায় একলামশিয়া বলা হয়)। এই পরিস্থিতি দেখে সাথে সাথে রোগীর আত্মীয়স্বজন সোনারগাঁ সেন্ট্রাল হাসপাতাল নিয়ে যান এবং রোগীর পরিস্থিতি দেখে হাসপাতালের দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার সাথে সাথে রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। তারপর রোগীর স্বজনরা এখান থেকে নিয়ে ১২ই সেপ্টেম্বর রাত ২ ঘটিকার সময় ঢাকার বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে চিকিৎসা চালিয়ে ১৯ই সেপ্টেম্বর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেন। কিন্তু কিছু অসাধু সাংবাদিকরা না জেনেই ২০ই সেপ্টেম্বর রোগীর মুমূর্ষু অবস্থার কথা উল্লেখ করে প্রচার করেন। আমরা রোগীর সাথে কথা বলে আসছি, রোগী এখন সুস্থ আছে। ডাঃ শিউলী সরকারের বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগের কোনো সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ডাঃ শিউলী সরকার এক প্রতিবাদ লিপিতে বক্তব্য দিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে জড়িয়ে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট। আমার নামে সাবেক ওয়ার্ড সদস্য মো. ইসমাইল হোসেন যে অভিযোগ থানায় করেছে সেটা ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এমনকি অভিযোগে বলা হয়েছে আমি ভুল চিকিৎসা দিয়েছি। এখন আমার প্রশ্ন হলো, আমি যে ভুল চিকিৎসা দিয়েছি সেটার কেইস সামারি কোথায়? তাকে প্রমাণ করতে বলেন! সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত না করে ঘরে বসেই সংবাদ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কয়েকটি অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়া। আমি এই ভুয়া সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ডাঃ শিউলী সরকার আরও বলেন, আমি তাকে সিজার করেছি। সে আমার হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাড়ি ফিরার পর রোগীর যে কোনো সময় পোষ্ট পারটাম এনসেফালোপ্যাথী সিন্ড্রম হতে পারে। সেটার জন্য আমাকে ভুল চিকিৎসার অপবাদ দেওয়া কোনোভাবেই ঠিক হয়নি! আমি এতে সামাজিক ও মানষিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছি। দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে কথিত দৈনিক পত্রিকাগুলোকে বিষয়টি আরও গভীরভাবে অনুসন্ধান করা উচিত ছিলো বলে আমি মনে করছি। তবে আমি তথাকথিত হলুদ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অচিরেই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁ সেন্ট্রাল হাসপাতালের ম্যানেজার মো. ইব্রাহীম খলিল মোল্লা বলেন, আমার হাসপাতালের ডাক্তারের নামে যে অভিযোগ উঠেছে সেটা ভুয়া ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর জটিলতা দেখা দিয়েছে এটা সম্পূর্ণ মনগড়া কথা। তিনি আরও বলেন, কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় আমার দেওয়া যে বক্তব্য প্রকাশ হয়েছে সেটা ভুয়া ও বানোয়াট কথাবার্তা। কেউ এর সত্যতা প্রমাণ করতে পারবে না।
এব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ এ এফ এম মুশিউর রহমান বলেন, ডাঃ শিউলী সরকারের যদি বিএমডিসি রেজিষ্ট্রেশন থাকে তাহলে তাকে ভুয়া ডাক্তার বলা যাবে না। রোগীর পরবর্তী খিচুনির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, রোগীর যে কোনো সময় পোষ্ট পারটাম এনসেফালোপ্যাথী সিন্ড্রম হতে পারে। এতে ডাক্তারকে ভুল চিকিৎসার অপবাদ দেওয়া যাবে না।