নিজস্ব প্রতিবেদক।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনী, বিপুল পরিমান অবৈধ অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত চাঞ্চল্যকর অপরাধে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে র্যাব জনগনের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
বর্তমানে দেশে মানব পাচারের মত ঘৃন্যতম অপরাধ থেমে নেই। মানব পাচারকারী চক্রের টার্গেট দরিদ্র মানুষ। পাচারকারীরা বিদেশে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে সহজ সরল এই মানুষগুলোকে ফাঁদে ফেলে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার জগতে। পাচারকারীদের পাতা জালে জড়িয়ে অবৈধ পথে বিদেশ পাড়ি দিতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে এসব মানুষ। যার অধিকাংশই নারী। এসকল নারীদেরকে বিদেশে লোভনীয় ও আকর্ষণীয় বিভিন্ন পেশায় চাকুরীর কথা বলা হলেও তাদেরকে বিক্রি করে দেওয়া হয় এবং জোরপূর্বক সম্পৃক্ত করা হয় ডিজে পার্টি, দেহ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে।
এই পর্যন্ত র্যাব-১ আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের বিদেশী নাগরিকসহ অসংখ্য মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। এসকল মানব পাচারকারী চক্রের নিকট হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১ গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখে এবং সম্প্রতি রাজধানীসহ বেশ কিছু এলাকায় মানব পাচারকারী চক্রের তথ্য পাওয়া যায়।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ০৭ আগস্ট ২০২২ ইং তারিখ আনুমানিক বিকাল ১৭০০ ঘটিকায় র্যাব-১, উত্তরা, ঢাকা এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিএমপি, ঢাকার পল্টন থানাধীন ৬৭, নয়া পল্টনস্থ সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্সের ৬ষ্ঠ তলায়, কনকর্ড এ্যাপেক্স রিক্রুটিং এজেন্সির অফিসে অভিযান পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য মূলহোতা ১) মোঃ আবুল হোসেন (৫৪), পিতা-বাহার আলী, বাড্ডা, ঢাকা এবং তার সহযোগী ২) মোছাঃ আলেয়া বেগম (৫০), স্বামী-আনোয়ার দেওয়ান, জাজিরা, শরিয়তপুরদের’কে গ্রেফতার করে। এসময় ধৃত আসামীদের নিকট হতে *৩১ টি পাসপোর্ট, বিভিন্ন ডকুমেন্ট ২২ পাতা, ০২ টি মোবাইল, ০৩ টি সীমকার্ড, ও ০৩ জন নারী ভিকটিমকে* উদ্ধার করা হয়।
ধৃত আসামী আবুল হোসেনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে দীর্ঘদিন যাবৎ বৈধ প্রতিষ্ঠান কনকর্ড এ্যাপেক্স রিক্রুটিং এজেন্সির আড়ালে নারী পাচার ও নির্যাতনের মতন এমন জঘন্য অপকর্ম করে আসছে। সে মূলত এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান। তার এ কাজের অন্যতম সহযোগী আলেয়া বেগমসহ অসংখ্য দালাল রয়েছে। দালালদের মাধ্যমে সে মূলত সমাজের বেকার, অল্পশিক্ষিত, অসচ্ছল ও দরিদ্র পরিবারগুলোর বিবাহত/ তালাকপ্রাপ্ত মেয়ে ও মহিলাদের মধ্যেপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে অধিক বেতনের চাকরি, বিমানে চড়ার অভিজ্ঞতা, রাজকীয় থাকা খাওয়া সুবিধা, স্মার্টফোন দেওয়া এবং সৌদিতে হজ্ব করানোর মত ধর্মভিত্তিক লোভনীয় চাকরি প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। উল্লেখ্য যে, বিদেশে যাওয়ার পর প্রথমে তারা ভিকটিমদের জানালাবিহীন কক্ষে আটকে রাখে এবং পরবর্তীতে ২-৩ দিন পর ঐ সমস্ত দেশের নাগরিকরা ভিকটিমদের পছন্দ করে তাদের বাসায় নিয়ে যায়। বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর তাদের দ্বারা সব ধরনের কাজ করানো, খাবারের উচ্ছিষ্ট খেতে দেওয়া বা কোন প্রকার খাবার খেতে না দেওয়া এবং অকারণে বেধরক মারধরের মাধ্যমে অমানবিক নির্যাতন করা হতো।
ধৃত আসামী আলেয়া বেগমকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে এই মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সহযোগী এবং দালাল হিসেবে কাজ করে। সে এর আগে আল ফালাহ, বিজয় নগর, পুরাতন পল্টন এজেন্সির মাধ্যমে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৮/৩৯ জন নারী এবং ২০২১ সাল থেকে ধৃত আবুল হোসেন এর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কনকর্ড এ্যাপেক্স রিক্রুটিং এজেন্সি এর মাধ্যমে মোট ১২ জন নারীকে বিদেশে পাঠায়। সে মূলত অন্যান্য দালালসহ গ্রামাঞ্চল হতে ভিকটিমদের বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে উল্লেখিত এজেন্সির অফিসে নিয়ে আসত। তাছাড়াও ধৃত আলেয়া বেগম বিদেশে যাওয়া ভিকটিম ও পরিবারের নিকট হতে সাদা স্ট্যাম্পে টিপসই নিয়ে তা পরবর্তীতে নিজেদের সুবিধামতো চুক্তিপত্র টাইপ করে নিতো।
ধৃত আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, তারা সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। ধৃত আসামী আবুল হোসেন “কনকর্ড এ্যাপেক্স রিক্রুটিং এজেন্সি” এর মালিক। তারা দীর্ঘদিন যাবত কনকর্ড এ্যাপেক্স রিক্রুটিং এজেন্সি পরিচালনা করে সাধারণ লোকজন বিশেষ করে মেয়ে ও মহিলাদের নিকট হতে পাসপোর্টসহ বিভিন্ন ডকুমেন্ট নিয়ে প্রসেসিং করে সৌদি আরব সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করে থাকে। এছাড়া তারা বিদেশে প্রেরণের কথা বলে সাধারণ মানুষের নিকট হতে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে উক্ত টাকা আত্মসাৎ করেছে মর্মে স্বীকার করে। অদ্যাবধি তারা প্রায় ১০০০ জন নারীকে এভাবে বিদেশে পাঠিয়েছে। র্যাব ০৩ জন নারীকে সফলভাবে উদ্ধার করছে এবং ভূক্তভোগী বাকী নারীদের উদ্ধার ও অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে সচেষ্ট রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।