বিশেষ প্রতিনিধি সোনারগাঁ।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসার মো. মতিউর রহমানের কার্যালয় থেকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের জন্যে ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন দীর্ঘ দিন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসাবে জিগির আওয়ামী লীগ থেকে সুবিধা নেওয়ার পর জাতীয় পার্টির নেতা বনে যাওয়া নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম ইকবাল। তার সাথে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করতে দেখা গেছে গত ১৫ জুন অনুষ্ঠিত মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী শাহ মো. সোহাগ রনিকে। যদিও সোহাগ রনি তার প্রায় সকল ধরনের কর্মকান্ডের ছবি বা ভিডিও নিজ ফেসবুক আইডিতে পোষ্ট করলেও জাতীয় পার্টির নেতা বনে যাওয়া আবু নাঈম ইকবালের সাথে মনোনয়ন কিনতে যাওয়া ছবি বা কর্মকান্ডের বিষয়ে ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু বিধি বাম। গণমাধ্যম কর্মীদের চোখ ফাঁকি দিতে পারেননি তিনি। কোন কোন গণমাধ্যম বিষয়টি প্রচার করেছে নিজ দায়িত্বে। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে যায় হাওয়ার গতিতে।
ঘটনাটির প্রায় দেড় সপ্তাহ হলেও এখনো রেশ যেন কাঁটছেনা ওই ঘটনার। এখনো গণমাধ্যম কর্মীসহ সাধারণ মানুষের কাছে সোনারগাঁ রাজনীতির মধ্যে জাতীয় পার্টির সাথে আওয়ামী লীগ নেতা দাবি করা সোহাগ রনি’র জেলা পরিষদের মনোনয়ন পত্র ক্রয় করার বিষয়টি বাতাসে উড়ছে।
এ নিয়ে কথা হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে। তারা ‘মুক্ত বাংলাদেশ’ এর কাছে এ বিষয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। দুই একজন নাম প্রকাশে কোন সমস্যা নাই জানালেও বেশিরভাগই অনুরোধ করেছেন নাম প্রকাশ না করার জন্যে।
জাতীয় পার্টির নেতা আবু নাঈম ইকবালের মনোনয়ন পত্র ক্রয়ের সময় সাথে সোহাগ রনি’র উপস্থিতি প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু বলেন, এটাই তার (সোহাগ রনি) আসল রূপ। সে (সোহাগ রনি) কোন না কোন ঘটনা ঘটিয়ে আলোচনায় থাকতে চায়। মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিভিন্ন ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের নামে মিথ্যা অপবাদ,বদনাম করে নিজের ও নিজ পরিবারের মিথ্যা বানোয়াট বিভিন্ন গল্প করে মানুষের বাহাবা নেয়ার চেষ্টা করে। এমনকি তারই কৃতকর্ম আর অযোগ্যতায় নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর সে আলোচনায় আসে, তার পরাজিত হওয়ার পিছনে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে। এখন আলোচনায় এসেছে জেলা পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে জাতীয় পার্টির নেতা আবু নাঈম ইকবালের সাথে মনোনয়ন পত্র কিনতে গিয়ে। আসলে সে এভাবে আলোচনায় থেকে খালি মাঠে গোল দেয়ার অপচেষ্টা সব সময়ই করে। এটা নতুন কিছু না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, সোহাগ রনি দিনে আওয়ামীলীগ আর রাতে জাতীয় পার্টির নেতা এমপিদের সাথে আঁতাত করে চলে এটা ওপেন সিক্রেট।
কেন আঁতাত করে চলতে হয় এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নেতা জানান, যেহেতু সে একটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে বৈধ-অবৈধ সকল কাজই করে সেহেতু, প্রভাবশালী নেতা বা প্রশাসনের সাথে সুসম্পর্ক রাখাটাই স্বাভাবিক। এক সময় প্রয়াত মোশারফ চেয়ারম্যানের পরিচয় দিয়ে প্রতিষ্ঠানের লাঠিয়াল হিসেবে মাসিক বেতনে জমি দখল করতো। বালু ভরাট দ্ব›দ্ব নিয়ে দুই-দুইটি হত্যা করেও শুধুমাত্র টাকা আর জেলার বিশেষ এক পরিবারের নাম বিক্রি করে সে সকল মামলা থেকে রেহাই পায়। কিন্তু কথায় আছে ‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে’। এটাই প্রমাণ হলো জেলা পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সাথে ফরম ক্রয়ে উপস্থিত থেকে।
তিনি আরও বলেন, অনুষ্ঠিত হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতারা জাতীয় পার্টি ও বিএনপি’র সাথে আঁতাত করে চলে বলে যে ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গরম করে ফেলেছে, যে ব্যক্তি জাত আওয়ামী লীগ বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলতো, সোনারগাঁয়ে বঙ্গবন্ধুর এতো সহচর থাকা সত্তে¡ও তাদের বাড়িতে না-কি বঙ্গবন্ধু এসে পানি পান করেছিল (হেসে বলেন) সেই আওয়ামী পরিবারের লোক কিভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সাথে না গিয়ে বিএনপি নেতার পক্ষ হয়ে মনোনয়ন পত্র ক্রয় করে তা পরিস্কার হওয়া দরকার বলে মনে করেন ওই নেতা। তিনি বলেন, সে যদি সত্যিকার অর্থেই সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের কর্মী হতো তাহলে কেন সে টাকা দিয়ে জেলা ছাত্রলীগের একটি পদ বাগায়, সোনারগাঁয়ে সে কেন আওয়ামী লীগের কোন অঙ্গসংগঠনেও নেই। কারণ নেতা হিসেবে তাকে সোনারগাঁয়ের মানুষ চিনেনা, নেতা হিসেবে সোনারগাঁয়ের নেতারাও চিনেনা। চিনে ভুমিদস্যু, সন্ত্রাসী হিসেবে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টি যদি আওয়ামী লীগের শরীক কোন দল হতো তাহলে ভিন্ন কথা ছিল। জাতীয় পার্টিতো এখন আওয়ামী লীগের শরীক দল নয়। তারা সরকারের বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন বিষেধাগার করছে। যে দল কথায় কথায় আওয়ামী লীগের বিষেদাগার করে সে দলের হয়ে মনোনয়ন ক্রয় করতে যাওয়া কার মন রক্ষার হাতিয়ার সেটা একমাত্র সোহাগ রনিই বলতে পারবেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা দাবি করেন।
তবে, জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের শরীক দল। এমন দাবি করে সোহাগ রনি মুক্ত বাংলাদেশকে বলেন, এইটা কোন বড় বিষয় নয়। তাই এ ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ না করলেই ভালো বলে এই প্রতিবেদককে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২২ আগামী ১৭ অক্টোবর সোমবার অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ আগামী সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের তারিখ ১৮ সেপ্টোম্বর। আপীলের শেষ তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর আর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর। প্রতিক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর এবং ভোট গ্রহণ ১৭ অক্টোবর।