বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪২ পূর্বাহ্ন
এই মাত্র পাওয়া খবর :
পৌর যুবদল নেতা রিতুর নেতৃত্বে বিশাল মিছিলের শোডাউন সোনারগাঁয়ের মেঘনা শিল্পনগরীতে টিস্যু কারখানায় ভয়াবহ আগুন সোনারগাঁয়ে বিভিন্ন মামলায় ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে সোনারগাঁ থানা পুলিশ সোনারগাঁওয়ে হাজী জালাল টাওয়ার সামনে..ডাস্টবিন বিতরণ সোনারগাঁয়ে ব্যবসায়ীকে নারী নির্যাতন মামলা দেওয়ার হুমকি ৯ মামলার আসামি ফারুক হোসেন রিপনকে ফতুল্লা থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার সোনারগাঁ থানা পুলিশের অভিযানে ফেনসিডিল ইয়াবাসহ নারী পুরুষ আটক সোনারগাঁও সাহিত্য নিকেতনের নতুন পরিচালনা পরিষদ গঠিত। সভাপতি আসমা, সম্পাদক রবিউল উদয়ন আদর্শ বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও সম্মাননা ক্রেষ্ট বিতরণ জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে সোনারগাঁওয়ে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও আলোচনা সভা

সোনারগাঁয়ে মৎস্যসম্পদ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হলেও প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২২
  • ১২৪ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় মেঘনা নদী, ব্রহ্মপুত্র নদ ও আশপাশের শাখানদে অবৈধভাবে বাঁশ পুঁতে ও গাছের ডালপালা ফেলে মাছ শিকার করা হচ্ছে। এতে মৎস্যসম্পদ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হলেও প্রশাসন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছরই উপজেলার মেঘনা নদীর নুনেরটেক, আনন্দবাজার, ঝাউচর, চরগোয়ালদী ও মেঘনার শাখানদীর আষাঢ়িয়ারচর, নয়াগাঁও, দড়িগাঁও, চরকিশোরগঞ্জ এবং ব্রহ্মপুত্র নদের শম্ভুপুরা থেকে অলিপুরা বাজার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অবৈধ পন্থায় মাছ ধরা হয়। এ বছরও প্রায় ১ শত ৫০ স্থানে নদ-নদীর দুই পাশের জায়গা দখল করে মাছ ধরা হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু আনন্দবাজার মেঘনা নদীতে ৫ থেকে ৬০ টি ঘের তৈরি করা হয়েছে।

বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, নদীতে নির্দিষ্ট একটি স্থান দখল করে চারপাশে বাঁশ পুঁতে রাখা। ভেতরে কচুরিপানা ও গাছের ডালপালা ফেলে ঘের দেওয়া হয়েছে। ঘেরের ভেতরে প্রচুর পরিমাণে মাছের খাবার ফেলা হয়। খাবারের খোঁজে মাছ ভেতরে চলে আসলে চারদিকে জাল দিয়ে ঘের আটকানো হয়। তারপর আটকা পরা মাছসহ পোনা শিকার করা হয়। উপজেলার নদীর তীরবর্তী দশটি ইউনিয়নে তিনটি নদীতে প্রায় অর্ধশতাধিক ঘের রয়েছে। নদীতে ঘের দেওয়ার কারণে নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। অন্যদিকে স্থানীয় প্রকৃত জেলেরা নদী থেকে উন্মুক্তভাবে মাছ শিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, ঘের তৈরিতে ছোট ছিদ্রযুক্ত জাল ব্যবহার করায় মা ও পোনা মাছসহ সব ধরনের মাছ আটকা পড়ছে। এতে জীববৈচিত্র্য ও মৎস্যসম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। অবৈধভাবে মাছ শিকার রোধে উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের সচেতনতামূলক কোনো কার্যক্রম নেই।

নদীতীরবর্তী স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও স্থানীয় নৌ পুলিশকে ম্যানেজ করে ও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে কিছু প্রভাবশালী মহল নদীতে ঘের দিয়ে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। সময়ের ব্যবধানে নদীর নাব্যতা হারিয়ে ক্রমশ মরা খালে পরিণত হচ্ছে। নদী দখল, পলি জমে ভরাট হওয়া, অবৈধভাবে ঘের দিয়ে মাছ শিকার করা এর অন্যতম কারণ।

উপজেলার নুনের টেক এলাকার একজন মৎস্যজীবী বলেন, নদীতে এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। নদীতে ঠিকমতো নামতেও পারেন না তারা। যেখানে সেখানে ঝোপ বা ঘের তৈরি করার ফলে নৌকা চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়াও ঘেরের আশপাশে মাছ ধরতেও তাদের বাধা দেওয়া হয় ঘরে মালিকদের পক্ষ থেকে। নদীর কিছু স্থানে জাল ফেললেও ঘেরের কারণে সাধারণ জেলেরা মাছ পাচ্ছে না। মাছ না পেয়ে অভাব অনটনে চলছে তাদের সংসার।

ঝোপ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সোনারগাঁ উপজেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অলিখিত চুক্তির ভিত্তিতে মেঘনা নদীর আনন্দবাজার, নুনের টেক, বারদী অংশে ঘের তৈরি করা যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আনন্দবাজার মেঘনা নদীতে গিয়ে দেখা যায়, ঘের তৈরি করে মাছ শিকার করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে। তারা বলেন, ‘আমরা দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে নদীতে মাছ শিকার করি। এসব ঘেরের মালিক এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। খোঁজ নিয়ে এক ঘের মালিকের সাথে কথা বললে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকে তিনি জানান, এলাকার অনেকেই ঘের তৈরি করে মাছ ধরে। আমিও তাই ঘের তৈরি করেছি। প্রশাসন থেকেও কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। কারন স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তা ও নৌ পুলিশকে ম্যানেজ করেই ঘের তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, একটি বড় ঘের তৈরি করতে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। বড় একটি ঘের থেকে প্রতি মৌসুমে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার মাছ পাওয়া যায়। যেসব ছোট জাল দিয়ে চারদিকে ঘের দেওয়া হয়, সেসব জাল থেকে পোনাসহ কোনো ধরনের মাছ বের হয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এতে মৎস্যসম্পদ ধ্বংস হচ্ছে, এ কথা সত্য। তবে প্রশাসনের বিধিনিষেধ থাকলে আমরা এ কাজে আসতাম না।

এ ব্যাপারে সোনারগাঁ নৌ পুলিশের ইনচার্জ মোসাদ্দিরুল হক বলেন, ঘের মালিকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ইতিমধ্যে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের সাথে আমরা ঘের অপসারণ অভিযানে অংশগ্রহণ করেছি। যদিও ঘের অপসারণের বিষয়টি মৎস্য কার্যালয়ের এটা আমাদের কাজ নয়। আমাদের কাজ মৎস্য কর্মকর্তারা যখন অভিযান চালাবে তখন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

এই বিষয়ে জানতে সোনারগাঁ উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা জেসমিন আক্তারের কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায় তিনি ছুটিতে আছেন। পরে মুঠোফোনে তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ম্যানেজ হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, নদ-নদী দখল করে মাছ আটকে ঘের বা ঝোঁপ দেওয়া মৎস্য আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মা মাছ ও পোনা ধরা পড়ার কারণে মাছের বংশবিস্তার হচ্ছে না। মৎস্যসম্পদ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে নদ নদীতে তৈরি করা ঘের অপসারণে আমরা অভিযান চালিয়েছি। ঘের তৈরির আগে, ঘের তৈরি না করার জন্য তাদের মাঝে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা সহ দুদিন মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হয়েছে। ঘের অপসারণে নতুন করে অভিযান চালানো হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার তো শুধু নদীতে কাজ নয়, আরো কাজ থাকে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 কাগজ কলম
Theme Customized By Max Speed Ltd.