নিজস্ব প্রতিবেদক।
সন্তান মানুষের মতো মানুষ হোক, পড়ালেখা করুক এমনটি অনেক বাবা-মা-ই চান। কিন্তু তা বাস্তবে পরিণত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে পারেন কজন। সন্তানদের প্রতি মায়ের ভালোবাসা অতুলনীয়। যা কখনও পরিমাপ করা যায় না।
বিশেষ করে নারীর জন্য তো ব্যাপারটি অনেক কঠিন। এই গল্পটি সন্তানের মঙ্গলের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাওয়া একজন সংগ্রামী মায়ের।
এই নারী রিকশাওয়ালা সুমি আক্তার সবুজবাগ থানা এলাকার নন্দিপাড়া দক্ষিণগাঁও এলাকার একটি ছোট ভাড়াবাসায় তার চার সন্তান এবং স্বামী এবং শাশুড়িকে নিয়ে বসবাস করছেন।
অভাব অনটনের সংসারে স্বামী ফরহাদের একা উপার্জনের টাকায় চলে সংসার। সাত সদস্যের পরিবারের খরচ ও সন্তানদের পড়ালেখা চালানো স্বামীর একার পক্ষে সম্ভব হয় না। যে কারণে উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে রিকশা বেছে নিয়েছেন সুমি।
সুমির চার সন্তানই স্কুলে পড়ালেখা করছে। সন্তানদের খাবার খরচ এবং লেখাপড়ার খরচ যোগাতে ঢাকার অলিতে-গলিতে রিকশা নিয়ে ছুটে চলেছেন এই অদম্য মা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় পরিবারের খরচ রিকশা ভাড়া ও বাসা ভাড়া দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিবারটিকে।
সুমি বলেন, ‘আমার চারটি সন্তান। সবাই পড়ালেখা করে। সব কিছুর দাম বেড়েছে। আমার স্বামী একটা ভাঙ্গা রিকশা চালায়। সারাদিন যে টাকা রোজগার করে নিয়ে আসে তা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হয় না। অনেক কষ্ট করে অন্যের রিকশা দিয়ে চালানো শিখেছি। প্রতিবেশি এক ভাই রিকশা কিনে দিলে সেটাই চালিয়ে কোনোভাবে বেঁচে আছি। ৩৫০ টাকা করে প্রতিদিন রিকশা ভাড়া দিতে হয়। অনেক সময় ভাড়ার টাকা উঠাতে রাত পর্যন্ত রিকশা চালাতে হয়। কিন্তু আমি মেয়ে মানুষ হওয়ায় বেশি রাত করে বাইরে থাকতে পারি না। আমি রিকশা চালায়, তাই অনেক সময় অনেকে খারাপ ভাবে দেখে। আবার অনেকে ভালো বলে। তবে আমি আমার সন্তানদের মানুষ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। অন্যায় কিছু তো করছি না।
তিনি বলেন, ‘আগে গার্মেন্টসে কাজ করতাম। কিন্তু ছেলেমেয়েদের দেখার কেউ নাই। কোনোদিন রাতে ডিউটি করতে হতো। তাছাড়া একটা দুর্ঘটনায় আমার একটা পায়ে অপারেশন করা হয়েছে। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না।’
সুমির প্রতিবেশিরা বলেন, ‘সুমির পরিবার অনেক কষ্ট করে সংসার চালায়। একজন মেয়ে হয়েও সাহসের সঙ্গে রিকশা চালিয়ে যাচ্ছেন সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য। তিনি পরিবারের জন্য পরিশ্রম করছেন। অন্যায় কোনো কাজ করে উপার্জন করছেন না। আমরা সবসময় তার মঙ্গল কামনা করি।’
সমাজের চক্ষুলজ্জা উপেক্ষা করে পরিবারের আত্মিক বাঁধনে সুমিরা ছুটে চলেছেন আপন গতিতে। হয়তো কেউ সুমিদের পাশে দাঁড়িয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে তাদের স্বপ্ন পূরণের পথে। সূত্র বাংলাভিশন নিউজ