নিজস্ব প্রতিবেদক।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর সেনপাড়া এলাকা থেকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত দুই আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে সোনারগাঁ থানা পুলিশ। গত সোমবার সকালে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো সুমি আক্তার ওরফে পাখি ও তার স্বামী আবু বকর সিদ্দিক। গ্রেপ্তারকৃতরা আলী হোসেন নামের এক সাটার মিস্ত্রিকে কাঁচপুর থেকে অপহরণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ১২ টুকরো করে ডেমরার সারুলিয়া এলাকায় ঝিলের পানিতে ফেলে দেয়। স্বামী নিখোঁজের ঘটনায় নিহত আলী হোসেনে স্ত্রী মিনু বেগম বাদী হয়ে গত মে মাসের ১৯ তারিখে সোনারগাঁ থানায় সাধারণ ডায়েরী করে। এর আগে আলী হোসেন ৪ মে কাঁচপুর সেনপাড়া এলাকা থেকে সন্ধ্যা থেকে তিনি নিখোঁজ হন। জিডির সূত্র ধরে পুলিশ তদন্ত শুরু করলে গত সোমবার সকালে ঘটনার সত্যতা পেয়ে সোনারগাঁ থানায় অপহরণ ও হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার দায়েরের ৮ ঘন্টার মধ্যে আসামীদের গ্রেপ্তার করে নারায়ণগঞ্জ আদালতে হাজির করা হলে গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দি দেয়। গ্রেপ্তারকৃত আবু বকর সিদ্দিক গতকাল মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শামাসাদ বেগমের আদালত ও সুমি বেগম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট সানজিরা সরোয়ারের আদালতে লোমহর্ষক জবানবন্দি দেয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ জানান, গ্রেপ্তারকৃত সুমি আক্তার একজন পেশাদার পতিতা। সেই সুবাদে চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে কাঁচপুর খাসপাড়া এলাকার শফিকুল ইসলামের ভাড়াটিয়া সাটার মিস্ত্রির সঙ্গে মো. আলী হোসেন মোল্লার সঙ্গে তার নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক হতো। সেই সুবাদে আলী হোসেন মোল্লা ও সুমি আক্তারের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। পরবর্তীতে গত এপ্রিল মাসে সুমি আক্তারের সাথে ভোলার চরফ্যাশনের মোহাম্মদপুর গ্রামের মো. বাগন আলীর ছেলে আবু বকর সিদ্দিকের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে সুমি আক্তার তার পেশা ছেড়ে দেয়। কিন্তু আলী হোসেন সুমি আক্তারকে নিয়মিত মোবাইল ফোনে বিরক্ত করতো। আলী হোসেনের সুমির প্রতি আগ্রহ থাকলেও সুমির কোন তার প্রতি আগ্রহ ছিল না। গত ৪ মে সন্ধ্যায় কাঁচপুর সেনপাড়া এলাকায় সুমি আক্তার আলী হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন। আবু বকর সিদ্দিক বাসায় না থাকায় আলী হোসেনকে কাঁচপুর থেকে সারুলিয়া এলাকায় নিয়ে যায় সুমি আক্তার। ওই রাতে স্বামী আবু বকর বাসায় এসে তাদের দুজনকে এক সঙ্গে দেখতে পায়। এসময় তাদের মধ্যে বাগ বিতন্ডা ও ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে আলী হোসেনকে আবু বকর সিদ্দিক ঘুষি মেরে ফেলে দিয়ে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। হত্যার সময় সুমি আক্তার আলী হোসেনের পায়ে চেপে ধরে তাকে হত্যায় সহযোগিতা করে। হত্যার পর সুমি আক্তার ও তার স্বামী আবু বকর সিদ্দিক তাদের ঘরে থাকা বটি ও ছুরি দিয়ে পেট কেটে নারিভূরি বের করে ময়লার ঝুড়িতে করে ফেলে দেয়। সারা রাত তারা আলী হোসেনের লাশ ১২টুকরো করে। পরদিন রাতে লাশের সেই টুকরোগুলো ডেমরা সারুলিয়া ঝিলের বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেয়। ঘটনার এক মাস পর জিডির তদন্ত করে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়। গত সোমবার পুলিশ হত্যাকান্ডে জড়িত সুমি আক্তার ও আবু বকর সিদ্দিককে সারুলিয়া থেকে হত্যার পর লোমহর্ষক ঘটনা জানতে পারেন। তাদের স্বীকারোক্তিতে সোমবার সারাদিন সারুলিয়া ঝিলে ডুবুরি দিয়ে লাশের হাড়গোড়ের কোন সন্ধান পাননি। তবে তাদের বাসা থেকে আলী হোসেনের ব্যবহৃত জুতা উদ্ধার করে পুলিশ।
পরিদর্শক আহসান উল্লাহ আরো জানান, সুমির প্রথম স্বামী মদনপুর এলাকার জাহাঙ্গীর আলমকেও সুমি ও দ্বিতীয় স্বামী হত্যা করে লাশ বাড়ির পাশের একটি ড্রেনে ফেলে রাখে। পরবর্তীতে ডেমরা থানা পুলিশ লাশের কঙ্কাল উদ্ধার করে। ওই ঘটনায়ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেই হত্যাকান্ড থেকে তাদের মানুষ হত্যায় ভীতি দূর হয়ে যায়। সুমি ও আবু বকর সিদ্দিককে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ পৃথক আদালতে হাজির করা হলে দু’জনেরই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। অভিযোগ রয়েছে সুমির প্রথম স্বামী জাহাঙ্গীর আলম তাকে পতিতাবৃত্তিতে আসতে বাধ্য করেছে। সেই ক্ষোভে তাকে দ্বিতীয় স্বামী আবু বকর সিদ্দিকের সহযোগিতায় হত্যা করে।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত সুমি আক্তার ও আবু বকর সিদ্দিক পৃথক আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। স্বীকারোক্তি শেষে তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।